রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ০১:২১ অপরাহ্ন
এমাজউদ্দীন আহমদ: সামনে জাতীয় নির্বাচন। ফলে রাজনীতি সরব থাকবে নির্বাচনকে ঘিরে। এটা নতুন কিছু নয়। প্রত্যেকবার নির্বাচনের সময়ই রাজনীতির মূল কেন্দ্রে থাকে নির্বাচন।
তবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু, অবাধ এবং সবার অংশগ্রহণে না হয় তাহলে সেই নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয় না, বরং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে, স্বৈরতন্ত্রের সৃষ্টি করে। এ অভিজ্ঞতা দেশবাসীর সামনে আছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা থেকে বিএনপি নেতারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না, সে কথা বলেননি। তারা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই বলেছেন। তাদের যেসব দাবি তার মূল লক্ষ্য একটাই, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা। বিএনপি নেতারা বলেছেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনের আগে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে- এটা অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত দাবি। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে জনগণ নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে কি-না তা নিয়ে প্রবল সন্দেহ থেকে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব নির্বাচন হয়েছে তার অভিজ্ঞতা থেকে আরও স্পষ্ট হয়, নিজের ভোট নিজে প্রয়োগের নিশ্চয়তা সৃষ্টির জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই।
বিএনপি নেতারা আরও দাবি জানিয়েছেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে যেসব মামলা-মোকদ্দমা আছে সেগুলো তুলে নিয়ে তাদের মুক্তি দিতে হবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও কারাবন্দি আছেন। তার মুক্তির জন্য আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলেছেন। এগুলো যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য। দলের চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কীভাবে? দলের চেয়ারপারসনসহ শত শত নেতাকর্মীকে জেলে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। অতএব, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তার প্রমাণ মিলবে খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে অনেক কথা বলেছেন। নির্বাচন কেউ বানচাল করতে পারবে না বলে দৃঢ় বক্তব্য দিয়েছেন। আসলে কোনো রাজনৈতিক দলই নির্বাচন বানচালের কোনো কথা কখনোই বলেনি। বিএনপিও কখনও নির্বাচন বানচালের কথা বলেনি। বলেছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য, সেগুলো নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নতুন কিছুই বলেননি। পুরনো কথাগুলোই নতুন করে বলেছেন। শুধু ইভিএম পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে তাড়াহুড়ো না করার যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা একটা ভালো দিক।
এই ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে সেটা অশোভন এবং নির্বাচন কমিশনে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের অজ্ঞতার পরিচয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ দুনিয়ার সব দেশে ইভিএম অকার্যকর ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা হিসেবে বাতিল হয়ে গেছে। সেই ইভিএম পদ্ধতি একজন নির্বাচন কমিশনারের নোট অব ডিসেন্টের পরও কমিশনের সভায় পাস করিয়ে নেওয়ার অর্থ কী দাঁড়ায়? এর অর্থ বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিজে চলে না, তাদের পেছন থেকে কেউ চালায়। নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থা হলে তাদের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান কীভাবে সম্ভব?
এ জন্যই আমি আশা করব সরকার সদিচ্ছার পরিচয় দিয়ে অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য এবং অবাধ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো মেনে নেবে।
সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়